Feeds:
Posts
Comments

Posts Tagged ‘জাতি ও ধর্ম’

নদী কারু ধার ধারে না
কেন ধারবে?মানুষ নিজের দরকারে তার তীরে ঘর বাঁধে, মন্দির-মসজিদ-গুরুদ্বার-গির্জায় বানায়। বাঁধ তুলে তোমার-আমার করে মরে। আবার সেই নদীতেই প্রাতঃকৃত্যাদি, কাপড় কাচা, কাচা-চামড়ার শুদ্ধিকরণ ইত্যাদি সারে। যথেচ্ছ বালি কেটে বিক্রি করে। তীরের লোক মরল কি বাঁচল, জানার দদরকার বোধ করেনা। নদী তাই কারুপষা নয।আজিজের খালেদা পিসি, ধার্মিক মুসলমান, পাঁ বক্ত নামাজ পড়েন, যখন তখন উপোস করে করে আলসারে ধরেছে, তবু খালেদা বিবি গঙ্গার ধারে থকার সুবিধে, চিকিৎসসুবিধে , তবু।কারণ গঙ্গা হিন্দুদের কাছে দেবতুল্যা পবিত্র হতে পারে, কিন্তু মুসলমানের কাছে না-পাক।ভাইপোর মানেটা, তাতে পিসির কি?
শংকরলাল ছিল কেওটপাডার কৈবর্ত, তার বাপ মায়ের নিবাস ছিল গির্জার উলটোদিকের রাস্তায়, জোডামসজিদের কাছে।সাত ভাইবোনের মধ্যে সে বডো। তার এখনকার বাপ তার নিজের বাপ নয়।
আজিজ শংকরের প্রতিবেশী।উলটোদিকের বাড়ির মরিয়মের সঙ্গে জন্ম থেকেইতার বিয়ে কবুল হয়ে আছে, আজিজের নিজস্ব মতামতের প্রশ্ন কেউ তোলেনি। মরিয়মকে তার ভালোই লাগেঅবশ্য।
ইমানুয়েল বলে বটে আমরা পোর্টুগীজ়। সবাই জানে তার শরীরে আধ ছটাক পোর্টুগীজ় রক্ত আছে কিনা সন্দেহ।অরফ়্যানেজের রোজ়মেরীকে তার পছন্দ, যদিও মেয়েটা হ্যাঁ-না কিছুই বলেনি আজও। তার কোনও গোপন পছন্দ আছে কিনারে জানে?
এরা সকলেই সেন্ট জন্স বা তার আশেপাশের স্কুল থেকে এগারো ক্লাসের উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে।আজিজ মৌলানাআজাদ কলেজ জলপানি পেযে ভর্তিও হয়েছে—ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে। রোজ়মেরি অক্জ়িলিয়াম অর্ফ়্যানেজের মেয়ে,সীনিয়র কেম্ব্রিজ পাস করেছে অবলীলায়। চার্চ তাকে কলেজে পডাবেনা। তাই সে অক্জ়িলিযামে নিচু ক্লাসে বাচ্চা সামলানোর কাজ করবে বলে মনে মনে প্রস্তুত। মরিয়মপাঠী কিন্তু সে হুগলি উইমেন’স কলেজে পড়বে বলে কথা আছে। এদের পারিবারিক সংগতি সকলেরই খুব কম, নিম্ন মধ্যবিত্ত বললেও বাজিয়ে বলা হবে। তবে সকলেই স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে।বয়সটাই তো স্বপ্ন দেখার।মধ্যবিত্ত শব্দটা গোলমেলে।বিত্তে মধ্যম হলেই নয়, সমাজিক ব্যবহার মধ্যম বর্গের হতে হবে।
জলের সংগে এদের সকলের পারিবারিক বৃত্তি জডিয়ে আছে।
শংকর তার অবসর কাটায জলের পাশে, তার জল অবশ্য বিলায়েৎ আলির পুকুরের জল।
বিলায়েত সাহেবের বংশে চরাগ দেবার কেউ নেই, তাই বহুকাল পুকুরটার সংস্কার হয়নি।পাতা পডে পডে পচে যায় বলে র ফটিক জলও নেই নেই। কয়েকটা উলু ঘাস জলের ওপর মা থা তুলে আছে, যেখানে যেখানেপানা নেই। জল ফডিংগুলো সেই উলুর এ মাথা থেকে ও মাথা উড়ে বেড়ায়।তাছাড়া আছে তেচোখো মাছের দল, তাদের ধরা যায়না, খাওয়াও যায়না, তাই তারা মহানন্দে আছে। জলের উপরিভাগের ব্রাউনিযন মোশনে ইতি উতি ঘুরে বেড়ায়। পানাহীন অংশে মেঘের ছায়া পডে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয় আকাশে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে এরোপ্লেন উড়ছে।অদূরে কাটোয়া লেভ়েল ক সামলায় রামখিলাওন। রেল কোম্পানিাকে বেতন দেয় সামান্য, কিন্তু তাকেএকটা মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছে। ফুমনি তাতেই খুশি। তাদের একটা ফুটফুটে যেও
তার নিজের নাম বিভুতি বাঁডুজ্জের চাঁদের পাহাড় বইটার সঙ্গে জডিয়ে আছে, তাই তার ইচ্ছে সে বডো হয়ে ফ়রকা যাবে। কি করে যাবে, বাপ-মা-দিদিয়ের খাওয়াবেন কি অত সব এখনও ভাবা হয় নি এখনও। তবু তো তার একটা নিজস্ব উচ্চাশা আছে। ইমানুয়েল বা আজিজের সে ইচ্ছেটাও নেই। তারা তাদের বাপ দাদা যা করত তাইই করবে, এত ভাবার কি আছে।
ইমানুয়েলের একটা পারিবারিক ডিঙি নৌকো আছে,তাতে চডে সে পশ্চিম কুল বরাবর দু পাঁচ কি. মি . ঘুরে বেড়ায়। গোমেজের বাড়ির অনতিদূরে, কে.বি.এফের দুনম্বর ইট ভাঁটির কাছে সে একটা নিরালা খাঁডি খুঁজে পেয়েছে। সেখানে তার ডঙির মত লম্বাআরও একটা ডিঙি ঢোকানো চলে, যদিও চওডাইতে কুলোবেনা। রোজদুপুরে সেখানে ডিঙি ভিডিয়ে সেঘুমিযে থাকে। সূয্যিডুবলে ঘরে যায়। কিন্তু খাঁডিটাতো মানুষের কাটা নদীর অংশ, তাতে সারাক্ষণ তিরতির করে ঢেউ দেয়। আকাশের ছায়া পডেনা। ছায়ার শখ ইমানুয়েলের নেই। সে প্রতিবিম্বের অভাব অনুভবই করেনা।
আজিজদের বাড়ির অবস্থা অন্য দু জনের চে যে ভাল। তারা বংশানুক্রমিক নিকিরি।জেলেরা নদীর ভাগ চাষীর মত। নদী তাদের নয, মাছ ইচ্ছেমত চাষ করা যায়না- নদীতে তো নয়ই।নিকিরিরা জেলে আর মাছের বাজারের মধ্যে যোগসূত্র, মিডলমেন। তারা বাজারটাকন্ট্রোল করে আর সেই অনুযায়ী জেলেদের কাজে লাগায়।দরকার পডলে বাড়তি নৌকো কিংবা নতুন জালের ব্যবস্থা করে। আজকের বাণিজ্যিক যুগে তারাউত্তরোত্তর ব্যাংকারের কাজ করে, সে ব্যাংকিংসহ টমাছের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত।তাদের বাডি জমি পুকুর যতীন চক্রবর্তীদের ভিটে ছিল আগে। তাই পুকুরটা ঠিক আয়তাকার নয, ইলিপ্টিকাল। তার ঠিক মধ্যিখানে ছিল একটা আন্দাজ পাঁচ ফুট বর্গের ছুঁড়লো চূডোওযালা শিবমন্দির। লঘু গূহ্যাংশের দিকটা স্নানের ঘাট। গুরু গূহ্যাংশে দুটো ঘাটঃ একটা বাসন মাজার, অন্যটা কাপড় কাচার।আজিজের বাপ মন্দিরটিাটা ভাঙেননি।

কাটোযা লেভ়েল ক্রসিঙের রামখিলাওন আর তার বউ বিলাসীকে হয়তো আপনারা চেনেন না। রেল কোম্পানি তাকে কানুনমাফিক গেট রক্ষার কাজ দিয়েছে। মাইনে খুবই কম, সংসার চলেনা। তবে মাথা গোঁজার ঠাঁইটাতো ফেলনা নয। এখানেই তাদের ফুটফুটে মেয়ে মোতিয়ার জন্ম হয়েছে সাডে ছ বছর আগে। এই আস্তানাটা আর লাগোয়া জমিটা আছে বলেই তারা কুমডোটা, লাউকিটা, শিমটা ফলিযে ভালমন্দ খেতে পায়। রাম তার বউকে কয়েকটা মুরগিও কিনে দিয়েছে। বউ রোজ তাদের খেদমত করে আর কোম্পানির কোযার্টারে ঘুরে ঘুরে ডিম বেচে। এবছর জাতীয রেল ইউনিয়ন লীডার ভ়ি.ভ়ি. গিরির দৌলতে বেশ কিছু টাকা বকেযা বোনাস বাবদ পাওয়া গেছে। বাজে খরচ না করে বউকে দুটো গাভীর ভৈঁস কিনে দিয়েছে রাম। ভৈঁস চডাবার জায়গা অঢেল, কিন্তু বিনতা আর কদ্রু বিলাযেতের মজা পুকরে চড়তে ভালোবাসে। শরীরও ঠান্ডা হয়, পানা আর বেগুনী রঙের ফুলসুদ্ধ শাপলা খেয়ে পেট পূর্তির আর পুষ্টি হয। ধপাস ঝপাস শব্দ শুনে শংকরের ভাতঘুমভেঙেগেল; চোখ চেয়ে দেখে উত্তরের অপেক্ষাকৃত দুর্গম ঘাটহীন দিকে, যেখানে অনেকটা জায়গা জুডে মেঘের ছায়া, সেখানে বিনতা আর কদ্রু নেমেছে। সে যদি কবিতা-মনস্ক হত, তো শক্তিকে প্যারাফ়্রেজ় করে বলতে পারত, এখানে মোষ মেঘের মত চরে।
তাদের কাজে বিলক্ষ্মণ দুপয়সা হয।কম্পিটিশনও বেশি। আজিজের বাপ শুধু ধনীদের নয, স্থানীয় সুন্নি সমাজের একজন মাতব্বরর বটে। মগরার কাছে তাদের নিজেদের ভিটের লাগোয়া একটা টলটলে ফটিক জলের পুকুরও আছে। আজিজ সেখানে দিনের অনেকটা সময কাটে।

রোমান ক্যাথলিক, হিন্দু আর মুসলমান তিন বন্ধুইকিন্তুআদপে জেলে কৈবর্ত।ধম্মো ব্যাপারটাই তো আসলে দেখনাই তকমা। তিন জনই কলেজে ভর্তির পর থেকেই SFI করত, এখন বিজয় মোদকের ভাবশিষ্য, যদিও মার্ক্সের রাজনৈতিক তত্ত্ব বুঝবার কোনও আগ্রহই নেই তাদের।ততারা ঈশ্বর/অলৌকিকে অবিশ্বাসী, কিন্ত্তে যার নিজের ধম্মো মানত।

তারা দাবী করে, আমাকে তারা আগেও চিনত। “তুই তা ক্লাস সেভ়েনে ক’দিনের জন্য সেন্ট জন্সে ভর্তি হয়েছিলি।মনে নেই ক্লাসে ডানলপের আরও ছেলে ছিলঃ দেবকিশোর, অরবিন্দ নন্দ, পন্ডিতজি মানে অসীম পাল। নৃপতিবাবু আমাদের ইতিহাস পড়াতেন। একদিন তিনি আসেননি বলে আমরা গোলমাল করছিলাম, পাশের ক্লাস থেকে ফ়াদার যোসেফ় এসে ধমক দিলেন। সরিৎ শর্মা ছিল তখন লাশ মনিটর, তাকে বললেন,”এই অনিরুদ্ধ আজ তোমাদের গল্প বলবে; কেউ চেঁচালে্, সরিৎ তুমি নাম নোট করে আমাকে বলবে। আমি বেত তো মারবই, সুরসাহেবের কাছে ধরে নিয়ে যাব। আমার আবছা মনে পড়ে,, আমাকে ফা়দার যোসেফ় শৃঙ্খলা নিয়ে যে কোনও একটা গল্প বলতে বলেছিলেন। আমি গিরীন্দ্রশেখরের লালকাল গল্পটা বলেছিলাম। সবার পছন্দ হয়েছিল।

তিনজনই সেন্ট জন’স থেকে বারো বারো ক্লাসের মাধ্যমিক প করেছে। রোজ়মেরি অকঅকজি়লিযাম অরফ়্যানেজ খেকে সীনিযর কেম্ব্রিজ।চার্চ তাকে কলেজে পডাবেনা, জানা কথা, তাই সেঅরফ়্যানেজেই ছোটদের খবরদারির কাজের জন্য অ্যাপ্লাই করেছে।

তাদেরল বাডি-জমি-পুকুর আগে ছিল দেববর্মনদের ভিটে ছিল ।তাই পুকুরটা ঠিক আয়তাকার নয, ইলিপ্টিকাল। তার ঠি মধ্যিখানে ছিল একটা আন্দাজ পাঁচ ফুট বর্গের ছুঁড়লো চূডোওযালা শিবমন্দির, মাথায একটা ঢালাই হার ত্রিশুলইলিপ্সের লঘু গূহ্যাংশের দিকটা স্নানের ঘাট। গুরু গূহ্যাংশে দুটো ঘাটঃ একটা বাসন মাজার, অন্যটা কাপড় কাচার।

Read Full Post »