কোনও কারণে,কারণটা আজ মনে নেই, একদিন রাতে আমায় ছোটমার সঙ্গে শুতে হয়েছিল।সে বাড়িতে ঘর ও খাটের অভাব। তাতে কি,পেছনদিকে উঠোনমুখী বারান্দা ছিল, সেখানে মাটিতে উথালি করে বিছানা পেতে আমরা চার ভাই, ছোটমাকে মাঝখানে রেখে শুলাম। গায়েদেবার কাঁথাটা অবশ্য পাথালিকরে রাখতে হল, নইলে অন্তগুলো খদ্দের আঁটবেনা। ছোটমা চমৎকার ভূতের গল্প বলতেন, তাঁর স্বভাবসিদ্ধ খুলনের দখনে ভাষায়।আমাদের পায়ের পাতা, মানে দেবুদা ও আমার, কাঁথার বাইরে, জায়গা নেই বলে,শীত শীতকরছে,তারকতটা ঠান্ডার জন্য, কতটা ভয়ে আজ আর মনে নেই। তখন থেকেই আমার অভ্যেস ছিল, খানিক্খন কাঁথা-লেপ-কম্বল দায় রাখলেই, বালিশের তলায় হাত ঢুকিয়ে ঠান্ডা খোঁজা।একবার সে চেষ্টা করতেই দেবুদা হাঁই মাই করে উঠল।বোধহয় ভাবল, ভূতের গুঁতো। আমার গরম লাগছিল বলে বাঁ হাতটা নিজেরই বালিশের নিচে ঢোকালাম।ও জায়গাটায় শীতলতর অনেক ক্ষণ থাকে,সেই তখনই সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর, পার্থ বিছানা ভেজাল। ওর বাঁপাশে ছোটমা ডান পাশে শঙ্কু, তারপর আমি। সবাইকে বাঁচিয়ে জলধারণ আমাকেই ভেজাল।আমিও ভিজে গেলাম রা না কেড়ে।
শাগন্জেনয়, বারোকোয়ারটারের বাইরে খামারপাডায় একটা বাডি ভাড়া নিয়ে লুকুকাকা কিছুদিন ছিল। লোকেন্দ্রনাথ বাবার খুডতুতো ভাই। তার মাকে বাবারা বলতেন ছোটমা। দেখাদেখি আমিও। তিনি রত্নগর্ভ। তিন ছেলেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র। একজন, অর্থনীতিবিদ্ সতযেন্দ্রনাথ পরে বিশ্ববিদযালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন। লুকু কাকাও কেমিস্ট্রির পণ্ডিত। পেটের দায়ে শা’গন্জ চাকরি নিয়েছিলেন। তাঁদের অন্য ভাইও ভাল ছাত্র, তাঁরতিন ছেলে দেবু,শঙ্কু ও পার্থ ছোটমার সঙ্গে থাকত। দেবু আমার চেয়ে অল্প বডো, তাও তখনকার রীতিতে তাকে দেবুদাবলতাম। শঙ্কু আমার সমবয়সী।পার্থ তখন খুবই ছোট।নীলু জ্যেঠা?া( সত্যেন) বিবাহিত কিন্তু িঃসন্তান। শান্তি জ্যেঠি,শুনেছি, একদা তাঁর ছাত্রী ছিলেন।
মনে মনে ঠিক করেছি,জল খাবনা, বাথরূম শাবনা। কে যেন হাঁটু চুলকোতে পা তুলল, অমনি ঠান্ডা ঢুকল কাঁতার ফাঁক দিয়ে।এই করেই রাতটাকেটে গেল, কেউ ঠিকমতত ঘুমোইনি।সকাল হতে লুকিয়ে কাকা ডেকে দিল, তাকে তো আপিস যেতে হবে। শান্তি জ্যেঠি আগেই চা করে দিয়েছিলেন। তাতে ছোটমার একটু। জ্জামান হল। একটু বেলায় শম্ভু রিকশায়ালায় বাহন হয়ে বাবা মা কলকাতা থেকেফিরলেন। আমরাও বাডি গেলাম।
আজও আমি প্রবল শীতে পায়ের পাতা গাত্রাবরণের বাইরেবের করে শুই, তাতে সেইভূতের গল্পটা একটু একটু
শান্তিনিকেতন অনেকবার সেরকম এজমালি বিছানায় ঘুমোতে হয়েছে।উথালি পাথালি করে নয়,তবে অনেক রাতে কঙ্করদা মাঝে মাঝে কলকাতা থেকে ফিরতেন। একবার ভর রাতে ভান্ডারীদা এলেন,মনে আছে।তবে অ্যাডভেন্চর হয়নি কোনও।তখনকার কলকাতার শহরতলির শীত আরও বেশি জাঁকিয় পড়ত। ব্যান্ডেল স্টেশনে নেমে রিকশায় জিটি রোডে পড়লেই পায়ের গুল জমে যেত। সার্ভ স্কুল পেরুলে তো নর্থ পোল।